10 Minute School
Log in

আলাের বৈশিষ্ট্য ও আলোক যন্ত্রপাতি

কোনো মাধ্যমে প্রতিসরণের ফলে যৌগিক আলো থেকে মূল বর্ণের আলো পাওয়ার পদ্ধতিকে আলোর বিচ্ছুরণ বলে। ১৬৬৬ সালে স্যার আইজ্যাক নিউটন পরীক্ষার সাহায্যে আলোর বিচ্ছুরণ আবিষ্কার করেন। প্রিজমে সাদা আলো পতিত হলে তা সাতটি বর্ণে বিশ্লিষ্ট হয়। 

  • দুটি স্বচ্ছ হেলানো সমতল পৃষ্ঠ দ্বারা সীমাবদ্ধ প্রতিসারক মাধ্যমকে প্রিজম বলে।
  • সাতটি বর্ণের  বিশ্লেষণকে বিজ্ঞানী নিউটন বর্ণালী আখ্যা দেন। বর্ণ হলো– বেগুনি, নীল, আসমানি, সবুজ, হলুদ, কমলা ও লাল। এদেরকে সংক্ষেপে বেনীআসহকলা’ বা VIBGYOR বলা হয়। বর্ণালীর প্রান্তদ্বয়ের বর্ণ হলো বেগুনি ও লাল।
  • বেগুনি আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম এবং বিচ্যুতি বা বিক্ষেপণ সবচেয়ে বেশি।
  • লাল আলো তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি এবং বিক্ষেপণ সবচেয়ে কম।
  • হলুদ রঙের আলোর বিচ্যুতি লাল বেগুনি আলোর মাঝামাঝি বলে এর বিচ্যুতিকে গড় বিচ্যুতি বলে এবং হলুদ রশ্মিকে মধ্যরশ্মি বলে।
  • সাতটি বর্ণ দ্বারা গঠিত সাদা আলো একটি যৌগিক রঙ।
  • আলোকতরঙ্গ কোনো ক্ষুদ্র কণিকার উপর পড়লে আলোকতরঙ্গ বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ে, এটিই আলোর বিক্ষেপণ
  • আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য যত বেশি তার বিক্ষেপণ তত কম। লাল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি বলে এটি অধিক দূর থেকে দৃষ্টিগোচর হয়। 
  • বিপদ সংকেতের জন্য, ট্রাফিক লাইটে লাল আলো ব্যবহার করা হয়। 

আকাশ নীল দেখানোর কারণ

সূর্যের সাদা আলো বিচ্ছুরিত হলে সাতটি বর্ণে বিশ্লিষ্ট হয়। বর্ণগুলো হলো বেগুনি, নীল, আসমানী, হলুদ, সবুজ, কমলা লাল। বর্ণালী হতে দেখা যায় যে, লাল আলোর বিক্ষেপণ সবচেয়ে কম এবং বেগুনি আলোর বিক্ষেপণ সবচেয়ে বেশি। প্রকৃত অর্থে যে আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম সে আলোর বিক্ষেপণ বেশি।

  • চাঁদে বায়ুমণ্ডল নেই, চাঁদ থেকে আকাশের রঙ কালো দেখায়।
  • কিছু বস্তুতে উত্তেজক আলোক আপতিত হলে বস্তুটি ভিন্ন জাতীয় আলো বিকিরণ করে। উত্তেজক আলোক যতক্ষণ থাকে ততক্ষণই ভিন্ন জাতীয় আলো বিকিরিত হয়। এ ঘটনাকে প্রতিপ্রভা বা Fluorescence বলে।
  • কিছু বস্তুকে সূর্যালোকে অনেকক্ষণ রাখার পর অন্ধকারে স্থাপন করলে এরা আলোক বিকিরণ করে। ঘটনাকে অনুপ্রভা বা  Phosphorescence বলে।
  • সিনেমার পর্দা সাদা অমসৃণ হয়। কারণ, পর্দা অমসৃণ হলে এর উপর আপতিত আলোকরশ্মির বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন ঘটে। পর্দা থেকে বিক্ষিপ্ত আলোকরশিগুলো সিনেমা হলের অভ্যন্তরে চারদিকে ছড়িয়ে প্রতিটি দর্শকের চোখে পড়ে।
  • বৃষ্টির ফোঁটায় সূর্যের আলো পড়লে বৃষ্টির ফোঁটা প্রিজমের ন্যায় কাজ করে এবং সূর্যের সাদা আলো বিশ্লিষ্ট হয়ে সূর্যের বিপরীত দিকে আকাশে উজ্জ্বল বর্ণের কার্ভ বা অর্ধবৃত্ত তৈরি করে। একে রংধনু বা রামধনু বলে।
  • প্রতিসরিত সাতটি রঙের রংধনু তৈরি হয়। রংগুলোর ক্রম হলবেগুনী, নীল, আসমানী, সবুজ, হলুদ, কমলা, লাল। 
  • কোনো বস্তু যদি সাতটি বর্ণের আলোকরশ্মির কোনোটিকেই শোষণ না করে সবগুলোকেই প্রতিফলিত করে, তবে বস্তুকে সাদা দেখায়  
  • পানি কণাগুলো দ্বারা সূর্যরশ্মি ১৪০° বিচ্যুতি কোণে দর্শকের চোখে পৌছে তবে দর্শক বৃত্তাংশকে বেগুনি রঙে দেখতে পাবেন।
  • বস্তুর বর্ণ পদার্থের কোনো ধর্ম নহে, এটি আলোর একটি ধর্ম কোনো একটি বস্তু  হতে আলোর প্রতিফলন, প্রতিসরণ বা শোষণের পরে যে বর্ণের আলোক চোখে পড়ে, সেটিই সেই বস্তু বর্ণ।
  • যে সকল বর্ণ অন্য বর্ণের সমন্বয়ে তৈরি করা যায় না তাদের মৌলিক বর্ণ বলে। তিনটি মৌলিক বর্ণ হল লাল, সবুজ এবং নীল
  • মৌলিক বর্ণের সমন্বয়ে সব রং তৈরি করা যায়। যেমন

সবুজ + লাল = হলুদ   

নীল + হলুদ = সাদা

লাল + নীল = ম্যাজেন্টা

সবুজ + নীল = ময়ূরকণ্ঠী নীল

লাল + আকাশী = বেগুনি  

লাল + নীল + সবুজ = সাদা

  • সাতটি বর্ণ থেকে যদি একটি বর্ণকে সরিয়ে নেয়া হয় তবে সাদা আলো রঙ্গিন রূপ ধারণ করে। এক্ষেত্রে যে বর্ণটি সরিয়ে নেয়া হলো এবং এর ফলে যে বর্ণ তৈরি হলো তারা একে অপরের পরিপূরক। যেমনবর্ণালীর নীল আলো সরিয়ে নিলে সামগ্রিক বর্ণটি হয় হলুদ। এক্ষেত্রে হলুদ নীল পরিপূরক বর্ণ।
  • লাল আলোতে গাছের পাতা কালো দেখায়।  লাল আলোতে সবুজ রঙ অনুপস্থিত হয়। অর্থাৎ লাল আলোটি শোষিত হয় এবং সবুজ আলো থাকে না। তাই কোনো আলো প্রতিফলিত হয় না। তাই কালো দেখায়।
  • নীল রং এর বস্তুর উপর যখন লাল আলো পড়ে তখন ঐ বস্তু দ্বারা লাল বর্ণটি শোষিত হয় এবং কোন বর্ণের আলোই আর প্রতিফলিত হয় না, ফলে বস্তুটি কালো দেখায়।
  • যে যন্ত্রের সাহায্যে চোখের নিকটবর্তী ক্ষুদ্র বস্তুকে বড় করে দেখা যায় তাকে অণুবীক্ষণ যন্ত্র বলে।
  • যে যন্ত্রের সাহায্যে দূরের বস্তু পরিষ্কারভাবে দেখা যায় তাকে দূরবীক্ষণ যন্ত্র বলে।
  • আকাশ পর্যবেক্ষণের জন্য যে দূরবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করা হয় তাকে নভোবীক্ষণ যন্ত্র বলে ডেনমার্কের বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ কেপলার সর্বপ্রথম যন্ত্র আবিষ্কার করেন। 
  • কর্নিয়া চক্ষুলেন্সের মধ্যবর্তী স্থান যে স্বচ্ছ লবণাক্ত জলীয় পদার্থে পূর্ণ থাকে তাকে অ্যাকুয়াস হিউমার বলে। অশ্রু বলতে আমরা অ্যাকুয়াস হিউমারকে বুঝি। 
  • রেটিনা চক্ষুলেন্সের মধ্যবর্তী স্থান যে জেলি জাতীয় পদার্থে পূর্ণ থাকে তাকে ভিট্রিয়াস হিউমার বলে।

চোখের যে ত্রুটির জন্য চোখ দূরের জিনিস স্পষ্ট দেখতে পায় না কিন্তু কাছের জিনিস স্পষ্ট দেখতে পায় তাকে ক্ষীণদৃষ্টি বলে। 

ক্ষীণদৃষ্টি দূর করার জন্য চশমায় লেন্স হিসেবে অবতল লেন্স ব্যবহার করা হয়।

দীর্ঘদৃষ্টিকে হাইপারমেট্রোপিয়া বলে। 

  • চোখের যে ত্রুটির জন্য চোখ কাছের জিনিস স্পষ্ট দেখতে পায় না তাকে দীর্ঘদৃষ্টি ত্রুটি বলে। 
  • চালশেকে প্রেসবায়োপিয়া বলে। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের চোখের পেশীর স্থিতিস্থাপকতা কমে যায় তখন এই সমস্যা দেখা যায়। বাইফোকাল লেন্সের চশমা ব্যবহার করে এই ত্রুটি দূর করা যায়।
  • যে ত্রুটির কারণে চোখ সমদূরত্বে অবস্থিত অনুভূমিক উলম্ব রেখাকে সমানভাবে  স্পষ্ট দেখতে পায় না, তাকে বিষম দৃষ্টি বা নকুলান্ধতা বলে। 
  • দুটি চোখ থাকলে, বস্তুর প্রকৃত অবস্থান ও দূরত্ব সম্পর্কে সঠিক ধারণা জন্মে। বস্তুর সম্পর্কে ত্রিমাত্রিক ধারণা পাওয়া যায় এবং বস্তুর দূরত্ব, বেধ, দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও রঙ সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ করা যায়। 
  • স্বাভাবিক দর্শনের জন্য স্পষ্ট দর্শনের নিকটতম দূরত্ব 25cm চোখ থেকে 25 cm দূরবর্তী বিন্দুকে চোখের নিকটবিন্দু বলে।

বর্ণান্ধতা

মানুষের তিনটি স্নায়ু তিন ধরনের (লাল, নীল, সবুজ) আলোর ঢেউয়ের আঘাতে সাড়া দেয় এবং এতে বস্তুর সঠিক বর্ণ আলো দৃষ্ট হয়। যদি কোনো লোকের এ তিনটি স্নায়ুর যে কোনো একটি অকেজো হয়ে পড়ে তবে সে লোক সে স্নায়ুর সাথে জড়িত রং দেখতে পায় না। এর ফলে সে লোক এক রংকে অন্য রং বলে ভুল করে। একে বর্ণান্ধতা বলে।

  • পুরুষদের বর্ণান্ধতা বেশি হয়, প্রতি 10 জন পুরুষের একজন বর্ণান্ধ। 
  • ক্যামেরায় ফিল্ম শক্ত সেলুলয়েডের তৈরি পর্দা। এর উপর সিলভার হ্যালাইড যৌগের একটি আলোকসংবেদী প্রলেপ থাকে। সাধারণত এটি সিলভার আয়োডাইড হয়ে থাকে।

সরল পেরিস্কোপ

  • কোনো দূরের জিনিস সোজাসুজি দেখতে বাধা থাকলে এ যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। দুটি সমতল দর্পণের ক্রমিক প্রতিফলন ব্যবহার করে এ যন্ত্র তৈরি করা হয়। ভিড় এড়িয়ে খেলা দেখা, শত্রু সৈন্যের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ প্রভৃতি কাজে এর ব্যবহার রয়েছে। এতে দর্পণ দুটি পরস্পর ৪৫°কোণে থাকে।
  • চোখের দৃষ্টিশক্তির ত্রুটি সারানোর জন্য চক্ষুগোলকে এক ধরনের লেন্স পরানো হয়, একে কনট্যাক্ট লেন্স বলে।
  • হলোগ্রাফি হলো লেন্সের ব্যবহার ব্যতিরেকে আলোকচিত্র তৈরির একটি পদ্ধতি।