পদার্থের ক্ষয় ও সাবানের কাজ
পদার্থের ক্ষয়
- এসিড–ক্ষারকের ক্রিয়া, মরিচা, এসিড বৃষ্টির ক্রিয়া, তড়িৎ রাসায়নিক বিক্রিয়া, তেজস্ক্রিয় পদার্থের ক্রিয়া, খর পানির ক্রিয়া ইত্যাদির কারণে পদার্থের ক্ষয় হয়।
- ধাতব পদার্থ ক্ষয়ের ক্ষেত্রে মরিচা, শক্তিশালী এসিডের ক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লোহায় মরিচা পড়া, কপার ও ব্রোঞ্জের উপর আস্তরণ পড়া, ধাতু নির্মিত যানবাহনে এসিড বৃষ্টির ক্রিয়া প্রভৃতি ধাতব পদার্থের ক্ষয়ের মুখ্য কারণ।
- এসিড বৃষ্টির ক্রিয়ায় দালান কোঠা, গাছপালা সহ অবকাঠামোর ক্ষতি হয়।
- কিছু দুর্বল এসিড যেমন: জৈব এসিড, ফেনল বা কার্বলিক এসিড ইত্যাদির কারণেও পদার্থের ক্ষয় হয়ে থাকে।
পদার্থের ক্ষয় দুই প্রকার। যথা:
- ইরোশন (Erosion): প্রাকৃতিকভাবে ভৌত পরিবর্তনজনিত কারণে যে ক্ষয় হয় তাকেই ইরোশন বলে।
- করোশন (Corrosion): রাসায়নিক বিক্রিয়ার কারণে পদার্থের যে ক্ষয় হয় তাকে করোশন বলে।
ধাতুর ক্ষয়:
ধাতুর ক্ষয় একটি জারণ–বিজারণ প্রক্রিয়া।
- এক মোল কনসেনট্রেটেড(গাঢ়) নাইট্রিক এসিড ও তিন মোল কনসেনট্রেটেড (গাঢ়) হাইড্রোক্লোরিক এসিডের মিশ্রণকে অ্যাকোয়া রেজিয়া বা রাজ অম্ল বলে।
- প্লাটিনাম, স্বর্ণ, ইরিডিয়াম প্রভৃতি অভিজাত ধাতু যে কোনো গাঢ়ত্বের নাইট্রিক এসিড বা হাইড্রোক্লোরিক এসিডে দ্রবীভূত হয় না কিন্তু অ্যাকোয়া রেজিয়া দ্রবণের আনুপাতিক এসিড মিশ্রণ, এসব অভিজাত ধাতুকে দ্রবীভূত করতে পারে। এ কারণে এ এসিড মিশ্রণকে রাজ অম্ল বা অম্ল-রাজ বলা হয়।
- স্বর্ণের খাদ নির্ণয় করতে অ্যাকোয়া রেজিয়া ব্যবহার করা হয়।
- বিশুদ্ধ কপার বা কাঁসা বা পিতলের তৈরি কোন জিনিসকে যদি খোলা পরিবেশে অনেকদিন রেখে দেওয়া হয় ফলে এদের উপর কালো বা বাদামী বা সবুজ বর্ণের আস্তরণ পড়ে, এই আস্তরণকে বলা হয় তাম্রমল।
- অ্যাকোয়া রেজিয়া বা রাজ অম্ল রাসায়নিক সংকেত: HNO_3.3HCl
এসিড বৃষ্টি:
যে বৃষ্টির পানির pH এর মান 5.5 এর নিচে থাকে তাকে এসিড বৃষ্টি বলা হয়। শিল্প কারখানা হতে সালফার ও নাইট্রোজেনের বিভিন্ন অক্সাইড (SO, NO) বায়ুতে ছড়িয়ে পড়ে। বজ্রপাতের সময় বায়ুর তাপমাত্রা থাকে 3000 ডিগ্রী সেলসিয়াস। এ তাপমাত্রায় সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড বায়ুর অক্সিজেন ও বৃষ্টির পানির সাথে দ্রবীভূত হয়ে সামান্য সালফিউরিক এসিড ও নাইট্রিক এসিড, নাইট্রাস এসিড উৎপন্ন করে যা বৃষ্টির পানির সাথে মাটিতে পতিত হয়।
- এসিড বৃষ্টি ধাতু নির্মিত যানবাহন, ব্রীজ, বিভিন্ন স্থাপনা ইত্যাদির ক্ষতি সাধন করে থাকে।
- ধাতুর ক্ষয় রোধে ইলেকট্রোপ্লেটিং ব্যবহার করা হয়।
- তড়িৎ বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে একটি ধাতুর উপর আরেকটি ধাতুর প্রলেপ দেওয়ার প্রক্রিয়াকে ইলেকট্রোপ্লেটিং বলে।
- নাইট্রিক এসিড একটি শক্তিশালী এসিড ।
ডিনামাইট:
- ক্যাইজেলগার (Kieselguhr) এর সাথে নাইট্রোগ্লিসারিন মিশিয়ে ডিনামাইট তৈরি করা হয়, নাইট্রোগ্লিসারিন পাওয়া যায় গ্লিসারিন ও গাঢ় নাইট্রিক এসিডের বিক্রিয়া হতে।
- সুইডিশ রসায়নবিদ আলফ্রেড নোবেল ডিনামাইট আবিষ্কার করেন|
- ডিনামাইট ব্যবহার করে পাহাড় ধ্বংস করে সড়ক গড়ে তোলা হয় ।
টি.এন.টি (TNT):
- এটি একটি বিস্ফোরক যা 2,4,6 – ট্রাই নাইট্রো টলুইন বা টি.এন.টি নামে পরিচিত।
- টলুইনকে ধূমায়িত(fuming) নাইট্রিক এসিড ও ধূমায়িত সালফিউরিক এসিডের মিশ্রণ দ্বারা নাইট্রেশন করে এটি প্রস্তুত করা হয় ।
- পরিবেশে মরিচার ক্রিয়ায়, এসিড বৃষ্টির ক্রিয়া এবং তড়িৎ রাসায়নিক ক্রিয়ায় ধাতব পদার্থের ক্ষতি হয় ।
অ্যানোডাইজিং:
- অ্যানোডীয় জারণের মাধ্যমে অ্যালুমিনিয়াম ও এর সংকর ধাতু নির্মিত দ্রব্যাদির গাত্রে এক ধরনের সূক্ষ্ম প্রলেপ দেয়া হয়, এটি অ্যানোডাইজিং। এই আবরণ তড়িৎ কুপরিবাহী। এর ফলে সৌন্দর্য সৃষ্টি, ক্ষয় রোধ এবং তড়িৎ অন্তরক ধর্ম সৃষ্টি হয়। এটি মূলত ধাতুকে ক্ষয় হতে রক্ষা করে ।
- পানির পাইপে দস্তার প্রলেপ দেয়া থাকে।
- লোহার মরিচা প্রতিরোধের জন্য প্রধানত বায়ুতে এর জারণ বন্ধ করতে হবে। এজন্য লোহা যাতে বাতাসের অক্সিজেন ও পানির সংস্পর্শে না আসতে পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। লোহার গায়ে রং বা আলকাতরার প্রলেপ দিয়ে; লোহার উপর দস্তা বা টিনের প্রলেপ দিয়ে; লোহার উপর ইলেকট্রোপ্লেটিং-এর মাধ্যমে সিলভার, কপার, ক্রোমিয়াম, ও নিকেলের আবরণ দিয়ে মরিচা প্রতিরোধ করা যায়।
গ্যালভানাইজিং:
- কোনো ধাতুর(সাধারণত লোহা বা ইস্পাত) উপর দস্তার প্রলেপ দেয়াকে গ্যালভানাইজিং বলে।
- মরিচা প্রতিরোধ করার জন্য লোহার উপর দস্তা বা জিংকের প্রতিরোধক প্রলেপ দেয়াকে গ্যালভানাইজিং বলে। ইতালীয় বিজ্ঞানী লুইগি গ্যালভানির নামানুসারে এই প্রক্রিয়াকে গ্যালভানাইজেশন (galvanization) নামকরণ করা হয়েছে।
- জি.আই শিটে দস্তার প্রলেপ থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যাচু অব লিবার্টির উপর তামার সবুজ আস্তরণ পড়ায় এটি দেখতে ঈষৎ সবুজ বর্ণের হয়েছে। এ আস্তরণের নাম তাম্রমল। তাম্রমল তৈরির মাধ্যমে তামা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
- তামা অনেকদিন রেখে দিলে বায়ুর উপস্থিতিতে এর উপর বিভিন্ন অক্সাইড, সালফাইড, সালফেটের আস্তরণ পরে। এজন্য তামার উপরিভাগ সবুজ হয়ে যায়।
- খাবার লবণে প্রায়ই ভেজাল হিসেবে ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড ও ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড থাকে। খাবার লবণের ভেজালগুলো পানিগ্রাসী পদার্থ। এজন্য খাবার লবণ বর্ষাকালে আর্দ্র অবস্থায় সিক্ত হয়ে উঠে। এতে খাবার লবণ গলে যায় ।
সাবান
- সোডিয়াম/পটাসিয়াম স্টিয়ারেট হলো সাবান, উচ্চতর ফ্যাটি এসিডের সোডিয়াম বা পটাসিয়াম লবণকে সাবান বলে।
- সাবানের মূল উপাদান হল চর্বি এবং ক্ষার। ক্ষার হিসেবে ব্যবহৃত হয় কস্টিক সোডা বা কস্টিক পটাশ ।
- চর্বি হিসেবে বিভিন্ন পশুর চর্বি, উদ্ভিজ্জ তেল (নারিকেল তেল, পাম তেল, জোজোবা তেল) এবং প্রাচীন তেল (ক্যাস্টর তেল, অলিভ অয়েল) ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়।
- সাবান তৈরিতে উপজাত হিসেবে গ্লিসারল পাওয়া যায় ।
- সেভিং সাবান একটি স্বল্প ক্ষারযুক্ত সাবান। এটি তৈরির প্রধান উপাদান কস্টিক পটাশ ।
- লন্ড্রি সাবানের উপাদান চর্বি, কস্টিক সোডা ও রঞ্জক। এতে উদ্ভিজ্জ তেল, সুগন্ধি, জীবাণুনাশক থাকে না।
ডিটারজেন্ট
- ক শ্রেণির পরিষ্কারক যা উচ্চতর অ্যালকোহলের সাথে সালফিউরিক এসিড ও কস্টিক সোডার বিক্রিয়ায় ডিটারজেন্ট পাওয়া যায়।
- ডিটারজেন্ট এর রাসায়নিক নাম সোডিয়াম লরাইল সালফোনেট।
- সাবান হল উচ্চতর জৈব এসিডের সোডিয়াম/পটাসিয়াম লবণ ।
- ডিটারজেন্ট হলো দীর্ঘ কার্বন শিকলবিশিষ্ট বেনজিন সালফোনিক এসিডের সোডিয়াম লবণ।
- প্রাকৃতিক চর্বি, তেল প্রভৃতি থেকে সাবান প্রস্তুত করা হয়। পেট্রোলিয়াম উপজাতসমূহ , প্রাণিজ, উদ্ভিজ্জ তেল ও চর্বি থেকে ডিটারজেন্ট প্রস্তুত করা হয়।
- খর পানিতে সাবান ফেনা তৈরি করে না, কিন্তু ডিটারজেন্ট উত্তম ফেনা তৈরি করে ।
- তৈলাক্ত ময়লা সাবানের তুলনায় ডিটারজেন্ট ব্যবহারে দ্রুত পরিষ্কার করা যায় ।
- পানি ও সাবানের পরিবর্তে অন্য রাসায়নিক দ্রবণ ব্যবহার করে কাপড় পরিষ্কার করার পদ্ধতিই ড্রাই ক্লিনিং।
- ড্রাই ক্লিনিং -এ ব্যবহৃত দ্রবণগুলোর অধিকাংশই অপরিশোধিত পেট্রোলিয়াম থেকে উদ্ভূত।
- সবচেয়ে প্রচলিত দ্রবণ হলো কার্বন টেট্রাক্লোরাইড ও টেট্রা ক্লোরো-ইথিলিন।