10 Minute School
Log in

কম্পিউটার নেটওয়ার্ক | Computer Network

বিভিন্ন কম্পিউটার কোনো যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্বারা একসাথে যুক্ত থাকলে তাকে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক (Computer network) বলে। মূলত ডেটা আদান-প্রদানের লক্ষ্যে দুই বা ততোধিক কম্পিউটারের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়। তাহলে বলা যায়, যেকোনো দূরত্বে স্থাপিত একাধিক কম্পিউটারের মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদান এবং প্রসেসিং এর জন্য ব্যবহৃত হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের সমন্বিত ব্যবস্থাই হলো কম্পিউটার নেটওয়ার্ক। 

কম্পিউটার নেটওয়ার্কের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি তথা বিভিন্ন রিসোর্সের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য তিনটি রিসোর্স হলো – 

  1. হার্ডওয়্যার রিসোর্স শেয়ার : একটি কম্পিউটারের কোনো হার্ডওয়্যার উপাদান একই নেটওয়ার্কের অন্তর্ভুক্ত অন্য কম্পিউটার সমূহে ব্যবহৃত হতে পারে, এটিই হলো হার্ডওয়্যার রিসোর্স শেয়ার। যেমন কোনো নেটওয়ার্কের অধিনস্থ কতগুলো কম্পিউটারে একটি মাত্র প্রিন্টার ব্যবহার করেই প্রিন্ট করার কাজটি করা যায়। 
  2. সফটওয়্যার রিসোর্স শেয়ার : প্রত্যেক কম্পিউটারের জন্য আলাদা আলাদাভাবে সফটওয়্যার না কিনে, একটি কপি কিনেই তা নেটওয়ার্কের অন্তর্ভুক্ত সকল কম্পিউটারে শেয়ার করা যায়।
  3. ইনফরমেশন রিসোর্স শেয়ার : কম্পিউটার নেটওয়ার্ক স্থাপনের মাধ্যমে এক কম্পিউটার থেকে ঐ নেটওয়ার্কের অন্তর্ভুক্ত অন্য কম্পিউটারের কোনো ফাইল বা ইনফরমেশন অ্যাকসেস করা যায়। অর্থাৎ একটি স্থানে তথ্য সঞ্চয় করে ঐ স্থান থেকে তথ্য শেয়ার করা যায়। যেমন ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে মূল সার্ভারে রক্ষিত ডেটাবেজ থেকে ফাইল ঐ নেটওয়ার্কের অধিনস্থ বিভিন্ন কম্পিউটারে শেয়ার করা যায়। 

নেটওয়ার্কের প্রকারভেদ (Types of network)

মালিকানা অনুসারে কম্পিউটার নেটওয়ার্ককে দুই ভাগে ভাগ করা যায় –

  • Private Network : প্রাইভেট নেটওয়ার্কে ব্যবহারকারীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রিত থাকে এবং কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কেউ এই ধরনের কম্পিউটার নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হতে পারে না। এই ধরনের নেটওয়ার্কে ট্রাফিক নেই বললেই চলে।
  • Public Network: পাবলিক নেটওয়ার্কে ব্যবহারকারীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রিত নয় এবং যেকোনো সময় যেকোনো কম্পিউটার এই ধরনের নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হতে পারে।

নিয়ন্ত্রণ কাঠামো অনুসারে নেটওয়ার্ক ৩ প্রকার। যথা-

Peer-to-Peer Network :

প্রত্যেক ইউজার তাদের রিসোর্স অন্যের সাথে শেয়ার করতে পারে এবং প্রতিটি কম্পিউটার একই সাথে সার্ভার ও ওয়ার্কস্টেশনে ভূমিকা পালন করে।

বৈশিষ্ট্য :

  • ইউজাররা তাদের কম্পিউটারের বিভিন্ন রিসোর্স শেয়ার করতে পারে।
  • ১০ জন বা তার কম ইউজারের জন্য সুবিধাজনক।
  • ডেডিকেটেড অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের প্রয়োজন হয় না।
  • বিশেষ কোনো সফটওয়্যার বা অপারেটিং সিস্টেমের প্রয়োজন নেই।
  • পুরো নেটওয়ার্কের ইউজার ও সিকিউরিটি কেন্দ্রীয়ভাবে ম্যানেজ করা সম্ভব নয়।

সুবিধা : 

  • নেটওয়ার্ক সেটআপ করা সহজ।
  • ব্যবহারকারী নিজেই যেকোনো রিসোর্স শেয়ার করতে পারে।
  • নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেটর না থাকায় খরচ কম।

অসুবিধা :

  • কেন্দ্রীয়ভাবে ডেটা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নেই।
  • নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুব দুর্বল।
  • একাধিক নেটওয়ার্কের সাথে সংযোগ দেওয়া অসুবিধা।

Client Server Network :

কেন্দ্রীয়ভাবে ডেটা স্টোর, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন এবং নেটওয়ার্ক চালানোর একটি উপযুক্ত সিস্টেম হলো ক্লায়েন্ট সার্ভার নেটওয়ার্ক।

বৈশিষ্ট্য :

  • সহজে সম্প্রসারণযোগ্য এবং দশ থেকে হাজার ব্যবহারকারীর জন্যও নেটওয়ার্কটি সুবিধাজনক।
  • নেটওয়ার্ক সার্ভার থাকে।
  • ইউজার লেভেল এক্সেস কন্ট্রোল ব্যবহার করে বলে ক্লায়েন্ট সার্ভার নেটওয়ার্ক বেশ সিকিউর।
  • নেটওয়ার্ক এডমিনিস্ট্রেটর দিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
  • ইউজারদের নেটওয়ার্ক ম্যানেজমেন্ট এর প্রয়োজন হয় না।

সার্ভারের সংখ্যা এবং স্টোরেজ মিডিয়ার উপর নির্ভর করে ক্লায়েন্ট সার্ভারকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় – 

  1. Centralized Network : সার্ভার ও টার্মিনালের সমন্বয়ে গঠিত একটি নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা যেখানে সার্ভার নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করে এবং টার্মিনালের মাধ্যমে ইউজার যুক্ত হয়ে সার্ভিস পেয়ে থাকে। টার্মিনাল দুই ধরনের। ডাম্ব টার্মিনাল ও ইন্টেলিজেন্ট টার্মিনাল। ইন্টেলিজেন্ট টার্মিনালের মেমোরি ও প্রসেসিং ক্ষমতা থাকলেও ডাম্ব টার্মিনালের তা নেই।
  2. Distributed Network : ওয়ার্কস্টেশন, শেয়ারড স্টোরেজ ডিভাইস এবং প্রয়োজনীয় ইনপুট ও আউটপুট ডিভাইস নিয়ে গঠিত এক নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা। ওয়ার্কস্টেশন নিজস্ব মেমোরি, স্টোরেজ ও সফটওয়্যার ডেটা প্রসেসিং ক্ষমতা ব্যবহার করে কাজ করে থাকে। কিছু ক্ষেত্রে Global Storage Media থাকে যার মধ্যে গ্লোবাল ইনফরমেশন ও সফটওয়্যার সংরক্ষিত থাকে। 
  3. Hybrid Network : ক্লায়েন্ট সার্ভার এবং পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে গঠিত। ক্লায়েন্ট সার্ভার অংশের প্রাধান্যই এক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়।

বৈশিষ্ট্য :

  • কেন্দ্রিয়ভাবে ক্লায়েন্ট-সার্ভার অ্যাপ্লিকেশনগুলোকে সাজিয়ে রাখা যায় ও ম্যানেজ করা যায়।
  • ইউজাররা নিজ নিজ কম্পিউটারের রিসোর্স শেয়ার করতে সক্ষম।
  • দুই ধরণের নেটওয়ার্ক থাকায় ইউজারদের প্রবেশ কিছুটা কঠিন।
  • ওয়ার্কস্টেশনে সংরক্ষিত ফাইল সমূহ ব্যাকআপ করতে অসুবিধা হয়।

ভৌগলিক বিস্তৃতি অনুসারে কম্পিউটার নেটওয়ার্ককে চার ভাগে ভাগ করা যায় –

Personal Area Network (PAN) :

PAN মূলত গড়ে তোলা হয় কোন ব্যক্তির নিকটবর্তী ব্যবহৃত বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের জন্য। এ ধরনের নেটওয়ার্কের বিস্তৃতি সাধারণত ১০ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। PAN এ ব্যবহৃত ডিভাইসগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ডিভাইস হচ্ছে ল্যাপটপ, পিডিএ, বহনযোগ্য প্রিন্টার, মোবাইল ফোন ইত্যাদি।

বৈশিষ্ট্য : 

  • বাড়ি, অফিস, গাড়ি বা যেকোনো স্থানে সহজেই এই ধরনের নেটওয়ার্ক তৈরি করা যায়।
  • খরচ তুলনামূলক কম।
  • তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। 
  • ডিভাইসগুলোর সংযোগ তারযুক্ত বা তারবিহীন হতে পারে।
  • তারবিহীন মাউস, কীবোর্ড এবং ব্লুটুথ সিস্টেম ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়।

Local Area Network (LAN) :

কোনো বড় বিল্ডিং, পাশাপাশি দুটি ভবন, বড় কোনো গবেষণাগার অথবা কোনো স্কুল-কলেজের ক্যাম্পাস এরিয়ার মধ্যে অবস্থিত কম্পিউটার সমূহের মধ্যে যে নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হয় তাকে LAN বলে। 

বৈশিষ্ট্য : 

  • নেটওয়ার্কের বিস্তৃতি সাধারণত ১০ km বা তার কম হয়ে থাকে।
  • ডেটা প্রবাহের গতি ১০ Mbps থেকে ১০০ Mbps পর্যন্ত হতে পারে।
  • ট্রান্সমিশন মিডিয়া হিসেবে সাধারণত Coaxial Cable, UTP বা Optical Fiber Cable ব্যবহৃত হয়। 
  • তুলনামূলক কম ব্যয়বহুল।
  • রিপিটার, হাব প্রভৃতি নেটওয়ার্কিং ডিভাইস সমূহ ব্যবহৃত হয়। 

Metropolitan Area Network (MAN) :

কোনো শহরে অবস্থিত একাধিক LAN এর সমন্বয়ে MAN গঠিত হয়। সাধারণত একটি শহরের কোনো ব্যাংক বা শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন শাখা অফিসের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য এই ধরনের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হয়। এছাড়া কোনো শহরের ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্ক MAN এর উদাহরণ। 

বৈশিষ্ট্য :

  • নেটওয়ার্কের বিস্তৃতি ১০০ কিমি এর মধ্যে থাকে।
  • ডেটা প্রবাহের গতি ১০ Mbps থেকে ১০ Gbps পর্যন্ত।
  • ব্যয় LAN অপেক্ষা বেশি।
  • ট্রান্সমিশন মাধ্যম হিসেবে টেলিফোন লাইন, মডেম বা মাইক্রোওয়েভ ব্যবহার করা হয়। 

Wide Area Network (WAN) :

বিভিন্ন ভৌগোলিক দূরত্বে অবস্থিত একাধিক LAN বা MAN এর সমন্বয়ে যে নেটওয়ার্ক গড়ে উঠে তাকে WAN বলে। অর্থাৎ WAN হলো এক দেশ হতে অন্য দেশ বা এক মহাদেশ হতে অন্য মহাদেশের মধ্যে স্থাপিত কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা। WAN এর একটি অন্যতম উদাহরণ হলো ইন্টারনেট। 

বৈশিষ্ট্য : 

  • এই ধরনের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত ভৌগোলিক এলাকা জুড়ে গড়ে উঠে। 
  • ট্রান্সমিশন মিডিয়া হিসেবে টেলিফোন লাইন, ফাইবার অপটিক ক্যাবল, স্যাটেলাইট মাইক্রোওয়েভ ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
  • বিভিন্ন নেটওয়ার্কিং ডিভাইস যেমন রাউটার, মডেম প্রভৃতি ব্যবহৃত হয়।